পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিতে যখন অতিরিক্ত গ্যাস নিঃসরণ হয় তখনই গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দেখা দেয়। এতে বুক ও পেটে জ্বালাপোড়া, দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস এবং পেটে ব্যথা সহ নানা লক্ষণ দেখা দেয়। দেরিতে খাবার খাওয়া, দীর্ঘক্ষণ পেট খালি রাখা, বেশি বেশি চা, কফি, ধুমপান বা মদপানের কারণে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা তৈরি হয়। এসিডের নিঃসরণ খুব বেশি হলে বুক জ্বালাপোড়া বা এসিড রিফ্লাক্স বা জিইআরডি এর মতো রোগ দেখা দেয়। আর এমনটা ঘটে যখন আমরা ভারি খাবার খাই বা মসলাযুক্ত খাবার খাই।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
গ্যাস-অম্বলের চিকিৎসায় এখানে এমন ১২টি সহজলভ্য উপাদানের উল্লেখ করা হল যেগুলো হয়তো আপনার রান্নাঘরে বা ফ্রিজেই থাকে:
১. তুলসী পাতা
এর শীতল এবং বায়ুনাশকারী উপাদান আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবেই গ্যাস-অম্বল থেকে মুক্তি দেবে। সুতরাং গ্যাস-অম্বলের কোনো লক্ষণ দেখা গেলেই কয়েকটি তুলসী পাতা খেয়ে নিন। অথবা ৩-৪টি তুলসী পাতা সেদ্ধ করে এক কাপ গরম পানিতে কয়েক মিনিট রেখে দিন। এরপর তা পান করুন।
২. ফিনেল বা মৌরি
খাবার পর ফিনেল বা মৌরি গাছের পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন গ্যাস-অম্বল ঠেকানোর জন্য। ফিনেল চা পান করার রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা। পরিপাক নালীকে সুস্থ্য ও সুখী রাখতে ফিনেল চা বেশ সহায়ক। এই চা সবচেয়ে বেশি কার্যকর বদহজম এবং পেট ফাঁপার চিকিৎসায়। ফিনলে বীজের মধ্যে যে তেল রয়েছে তা এই দুটি সমস্যার সমাধানে বেশ কাজে লাগে।
৩. দারুচিনি
এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে। ফলে এটি আপনার হজম ও শোষণ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে আপনার পাকস্থলির অবস্থা আরো ভালো করতে পারে। অন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে দারুচিনি চা পান করুন।
৪. ঘোল
ঘোলে থাকা ল্যাকটিক এসিড পাকস্থলিতে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকর। আরো ভালো ফল পাওয়ার জন্য এক গ্লাস ঘোলের সঙ্গে গোল মরিচ বা এক চা চামচ স্থল ধনে পাতা মিশিয়ে নিন।
৫. গুড়
গুড়ে রয়েছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেশিয়াম উপাদান। যা অন্ত্রের শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকর। এটি হজমে সহায়ক এবং আপনার হজম প্রক্রিয়াকে আরো ক্ষারীয় করে তুলবে ফলে গ্যাস কমবে। খাবার খাওয়ার পর ছোট্ট এক টুকরো গুড় খেয়ে নিন। গুড় দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এবং পেট ঠাণ্ডা করতেও বেশ কার্য়কর। আর একারণেই গ্রীষ্ম কালে গুড়ের সরবত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
৬. লবঙ্গ
ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি ও ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে হজমের সমস্যা দূরীকরণে লবঙ্গের জনপ্রিয়তা বহু পুরোনো। লবঙ্গ স্বভাবগতভাবে বায়ুনাশকারী। ফলে এটি খেলে পরিপাক নালীতে গ্যাস নির্গমণ হয় না। শিম ও কলাই রান্না করার সময় সঙ্গে লবঙ্গ মিশিয়ে নিন। এ ছাড়া গুঁড়ো লবঙ্গ এবং এলাচও খেতে পারেন। যা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূর করে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস বের হওয়া থেকে বাঁচাবে।
৭. জিরাপানি
গ্যাস নিষ্ক্রিয়করণ, হজমে সহায়তা এবং পেটের ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকর জিরা বীজ। ভাজা জিরা বীজ গুঁড়ো করে এক গ্লাস হালাক গরম পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। প্রতিবেলা খাবারের পর এই পানীয়টি খান।
৮. আদা
আদায় রয়েছে অসাধারণ হজম সহায়ক এবং প্রদাহরোধী উপাদান। খাবার খাওয়ার পর এক টুকরো আদা চিবিয়ে খান অথবা প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এক চামচ করে আদার রস পান করুন। অথবা এক কাপ গরম পানিতে আদা মিশিয়ে রস বের করে তা পান করুন।
৯. ঠাণ্ডা দুধ
দুধ পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক এসিডগুলো স্থিতিশীল করতে সহায়ক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা পাকস্থলিতে এসিড নিঃসরণে বাধা দেয়। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দেখা দিলেই এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ খেয়ে নিতে হবে।
১০. আপেল সিডার ভিনেগার
হালকা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা হলে এর চিকিৎসায় প্রতিদিন এক বা দুইবার ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে পান করুন। অথবা এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
১১. নারকেল পানি
নারকেলের পানি পান করলে দেহের পিএইচ এসিডের মাত্রা আরো ক্ষারীয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া এটি পাকস্থলিতে শ্লেষ্মা উৎপাদনেও সহায়ক। যা পাকস্থলিকে অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আর এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ ফলে তা হজমে সহায়তা করে পুনরায় গ্যাস-অম্বলের সমস্যা তৈরিতে বাধা দেয়।
১২. কলা
কলায় আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা এসিড রিফ্লাক্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। গ্যাস-অম্বল থেকে রেহাই পেতে এটাই সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা। প্রতিদিন একটি করে কলা খান তাহলেই গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন।
No comments:
Post a Comment